বৈদিক বিশ্ব হিউম্যানিটি এন্ড কাল্চারাল সোসাইটি
সার্বিক গুনময়ী শিক্ষা ও জাতহীন সমাজ
লেখক - ড্র. এ.কে. মাইতি, পী.এচডি.
হাজার বছরের ওপর জাতিভেদের কুপ্রথা ভারতীয় সমাজকে বিভক্ত
করে রেখেছে । এই বিভক্ত সমাজ ভারতের উন্নতির প্রতিবন্ধ । কি ভাবে এই সমাজ বিভক্ত হল তার এক সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরছি ।
বর্ন : ঋগবেদের সময় (৩০০০ – ৪০০০ বছর আগে) থেকে মানুষকে চারভাগে বিভক্ত করা হয়েছ, তার কাজের উপর ভিত্তি করে । যেমন, যাঁরা জ্ঞনী, দার্শনিক, তাঁদের বলা হল ব্রাহ্মণ । যুদ্ধ বিদ্যায় যাঁরা দক্ষ, তাঁদের বলা হল ক্ষএিয় । যাঁরা ব্যবসা করবেন, তাঁদের বলা হল বৈশ্য আর যাঁরা শ্রমিকের কাজ করবেন, তাঁদের বলা হল শুদ্র । সব বর্নের মানুষের পড়া লেখার অধিকার ছিল । শুদ্র পরিবারে জন্ম ছেলে বা মেয়ে পড়া লেখা করে জ্ঞনী, দার্শনিক হলে , তিনি ব্রাহ্মণ হবেন; উলটো টাও হতে পারত। একই পরিবারে, একজন ব্রাহ্মণ, একজন ক্ষএিয়, একজন বৈশ্য, একজন শুদ্র থাকতে পারত । সব বর্নের মানুষ রাজা হয়েছেন । মেয়েদের পড়া লেখার সমান অধিকার ছিল । মেয়েরা জ্ঞনী, দানিক হয়ে ৠষির স্থান অধিকার করেছেন । বৈদিক সময়ের কিছু প্রতিভাশালী ব্যাক্তির উদাহরন :
খীষ্ট্রপূর্ব : মৈত্রয়ী , গার্গি – ৠষি , দার্শনিক । সুস্রুতা – প্লাষ্টিক সার্জারীর জনক । চরক - ভারতীয় ঔষধের জনক । পতনঞ্জলী – যোগসুত্র । কনাদ – পরমানু তত্বের জনক ।
খীষ্ট্রাব্দ : কালীদাস (৩৬৬ খীষ্ট্রাব্দ
) – মহকবি । আর্যভট্ট (৪৬৭ খীষ্ট্রাব্দ) - শূন্যের আবিষ্কর্তা , জোতির্বিদ্যার জনক । বরাহমিহির (৫০০ খীষ্ট্রাব্দ) - জোতিশবিদ্যার জনক । ভাস্কর (২) ( ১১১৪ খীষ্ট্রাব্দ ) – গনিতবিদ্যার জনক । লীলাবতী ( ১১৫০ খীষ্ট্রাব্দ ) - গনিতঙ্গ । ক্ষনা (প্রায় ১২০০ খীষ্ট্রাব্দ ) – কবি, জোতিশবিদ্যায় পারদর্শিনী ।
জাতি
(caste) : প্র।য় ১০০০ বছর জাতি প্রথা ভারতবর্ষে চলছে । জাত মানে জন্ম । কারোর যে পরিবারে জন্ম , সেই পরিবারের কর্ম গ্রহন করা বাধ্যতামুলক । ব্রাহ্মণরাই শুধু পড়া লেখার অধিকারী । তার যোগ্যতা না থাকলেও, তাঁরাই করবেন পড়া লেখা । শুধু তাই নয়, ব্রাহ্মণ মেয়েরাও পড়া লেখা অধিকার থেকে বন্চিত হলেন । চর্মশিল্পি পরিবারের সন্তানকে চর্মশিল্পের কাজই করতে হবে, পড়া লেখার যোগ্যতা থাকলেও বা ইচ্ছা থাকলেও করার অধিকার নেই । সমাজের কতিপয় ব্যক্তিই পড়া লেখার ও চিন্তা করার সুযোগ পেল । ফলে সমাজ ধীরে ধীরে নীচে চলে গেল । বৈদিক সময়ে বহিশক্তি পরাজিত হয়েছে । জাতিবাদী সমাজে বহিশক্তি ভারতে চেপে বসল । ৩০০০ জাতি তৈরি হল।
উপজাতি (Subcaste) :
সমাজকে জাতে ভেঙ্গে মনুষ ক্ষান্ত হলনা, ভাঙ্গন প্রক্রিয়া আরও চলতে থাকল । প্রতিটি জাতিকে ভেঙ্গে তৈরী হল উপজাতি । যেমন, ব্রাহ্মণ এক বর্ন; কন্যাকুব্জা ব্রাহ্মণ, সুরীয়পারী ব্রাহ্মণ, গৌর ব্রাহ্মণ জাতি; শ্রীমালি, পুরোহিত, পুষ্কর্ন ব্রাহ্মণ উপজাতির উদাহরন ।
উপজাতি তৈরীর কারন হল , জাতির মধ্যে অভিজাত মানুষদের আলাদা হয়ে যাওয়া, এক জায়গা ছেড়ে অন্য যায়গায় বসতি স্থাপন, আচারের পরিবর্তন, পেশা বা কাজের পরিবর্তন, কাজের পদ্ধতির পরিবর্তন এবং অন্যান্য । এখন ২৫,০০০
উপজাতি আছে ।
এই বিষয়ে অভিঙ্গ ব্যক্তির মতে, উপজাতিকে সমাজের নিম্নতম গোষ্ঠি ধরা যেতে পারে, যাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক আছে এবং আচার – বিচারের মিল আাছে ।
সমাজ এত ভাগে বিভক্ত যে, এক উপজাতিতে বড়জোর কয়েক লক্ষ মানুষ আছে । এই কারনে, ভারতকে বহিঃশক্তির কাছে পরাজয় স্বীকার করতে হয়েছে এবং ভারতের বিকাশের পরিপন্থি । তাই বৈদিক বিশ্ব হিউম্যানিটি এন্ড কাল্চারাল সোসাইটি জাতহীন সমাজের প্রস্তাব রাখছে । জাতহীন সমাজ সম্ভব, যদি সার্বিক গুনময়ী শিক্ষা হয় ।
জাতবাদী সমাজের সংগে জাতহীন সমাজের কি পা্থক্য :
১
জাতবাদী সমাজ : আমার জাত নিয়ে গর্বিত । পারিবারিক সম্পর্ক নিজের জাতের মধ্যে ।
জাতহীন সমাজ : এক বৃহৎ এক্যবদ্ধ সমাজের সদস্য হিসাবে গর্বিত । পারিবারিক সম্পর্ক বৃহত্তর সমাজের মধ্যে ।
২
জাতবাদী সমাজ : কেবল এক শিক্ষিত, ধনী পরিবারে জণ্মই হল যোগ্যতার মাপকাঠি, নিজের শিক্ষা দীক্ষা মুল্যহীন, এ জন্ম দেয় অহংকার ও উদ্ধত আচরন।
জাতহীন সমাজ
: নিজস্ব শিক্ষা - দীক্ষা , আচর – ব্যবহারই তাঁর পরিচয়। এতে ব্যক্তি হয়ে ওঠে নিরহংকার, মানবিক।
৩
জাতবাদী সমাজ
: অন্য জাতের লোকের প্রতি সম্মান নেই । আমাদের জাতের মানুষরাই বড় কাজ করতে পারে।
জাতহীন সমাজ
: সকলকে সম্মান , প্রতিভা সবার মধ্যে আছে । শিক্ষা ও সুবিধা পেলে, যে কেউ বড় কাজ করতে পারে।
৪
জাতবাদী সমাজ : পারিবারিক সিদ্ধন্তে মেয়েদের ভুমিকা কম । কন্যা ও বৌমাকে আলাদা চোখে দেখা হয়। এতে পারিবারের সাফল্য কমে যায়।
জাতহীন সমাজ : পারিবারিক সিদ্ধন্তে মেয়ে ও ছেলের সমান ভুমিকা । কন্যা ও বৌমাকে সমান চোখে দেখা হয়। এতে পারিবারের উন্নতি তথা দেশের উন্নতি হয়।
৫
জাতবাদী সমাজ
: খারাপ, দু্ষ্ট লোককে বলা হয়- ও নীচু জাতের, তাই ও দু্ষ্ট । কোনো মানুষকে পছন্দ অপছন্দ করা হয় জাত দেখে ।
জাতহীন সমাজ : দু্ষ্ট লোক দু্ষ্টই । আইন তার ব্যবস্থা নেবে। পছন্দ অপছন্দ নির্ভর করে গুনবত্তাই উপর ।
৬
জাতবাদী সমাজ
: জাতকে বিভক্ত করে আরও উপজাতি বানিয়ে নিজেদের গোষ্ঠিকে প্রতিষ্ঠিত করা ।
জাতহীন সমাজ : সমাজে একতা এনে দেশকে সমৃদ্ধ করা ।
৭
জাতবাদী সমাজ : সামাজিক কিংবা ধার্মিক অনুষ্ঠান পুরুষ ব্রহ্মন পরিচালনা করেন এবং মন্ত্রে জাতের উল্লেখ করেন ।
জাতহীন সমাজ
: যে কেউ, পুরুষ কিংবা মহিলা জ্ঞান থাকলেই অনুষ্ঠান পরিচালনা করেতে পারবেন । মন্ত্রে জাতের উল্লেখ থাকবেনা, অন্যথা বাকী মন্ত্র ও পদ্ধতি সমান ।
বৈদিক বিশ্ব হিউম্যানিটি এন্ড কাল্চারাল সোসাইটি (Vedic Vishva Humanity & Cultural Society (https://www.vedicvishva.in) এক রেজিস্টার্ড এন.জি.ও., এই সংস্থা সার্বিক গুনময়ী শিক্ষা ও জাতহীন সমাজের জন্যে কাজ করে । দয়া করে, এই সংস্থার অন-লাইন সদস্য (on-line member) হয়ে, সংস্থার কাজকে সমর্থন ও সাফল্যমন্ডিত করুন । সদস্য হওয়ার জন্য কোনো মুল্য নাই ।
© 2025. | Vedic Vishva Humanity Cultural & Welfare Society All Rights Reserved. Powered By Itarsia India Limited